ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাশেই ৪ ইটভাটা নির্বিচারে পুড়ানো হচ্ছে বনের গাছ

Pic Pekua 07-03-2016 (2)এম.জুবাইদ. পেকুয়া ::

পেকুয়ায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কাছেই ৪ ইটভাটা! আর এসব অবৈধ ইটভাটায় নির্বিচারে পুড়ানো হচ্ছে বনের গাছ। জানা যায়, সরকারের পরিবেশ আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৩ (তিন) কিলোমিটারের আশেপাশে কোন ধরণের ইটভাটা তৈরী করে ইট পুড়া নিষিদ্ধ রয়েছে। কিন্তু অবৈধভাবে গড়ে উঠা পেকুয়ার ওই ৪ ইটভাটা পরিবেশ অধিদপ্তরের নীতিমালার কোন তোয়াক্কা করছেনা। এখানে গড়ে উঠা ইট-ভাটাগুলোর অবস্থান সরকারী বনাঞ্চলের মাত্র এক কিলোমিটারের মধ্যেই। পাহাড়ের সন্নিকটে এ ৪টি অবৈধ ইটভাটার অবস্থান হওয়ায় প্রতিনিয়ত পোড়ানো হচ্ছে বনাঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-গাছালি। অন্যদিকে ইট উৎপাদনের জন্য ব্যবহার হচ্ছে ফসলী জমির উপরিভাগ (টপ সয়েল)। ইট উৎপাদনের জন্য খনিজ কয়লা পুড়ানোর জন্য সরকার বাধ্যতামূলক করে আইন পাশ করলেও এসব ইট-ভাটাগুলোতে প্রতিনিয়িত পুড়ানো হচ্ছে বনের গাছ। শুধুমাত্র খনিজ কয়লা ওই ৪টি ইটভাটার সামনে লোক দেখানো মজুদ রাখা হয়েছে। এগুলো না জ্বালিয়ে মাসের পর মাস স্তুপ রাখা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইট পুড়ানোর জন্য খনিজ কয়লার কোন বিকল্প নেই। এর পরও কয়লায় আগুন ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ভাটির মালিকদের ইট উৎপাদনে সামান্য লাকড়ি পোড়ানোর নিয়ম রয়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অসাধু ইটভাটার মালিকরা কয়লার পরিবর্তে পুরোটাই লাকড়ি জ্বালিয়ে নির্বিঘেœ ইট তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম দক্ষিন বন বিভাগের অধীনে বারবাকিয়া ও টইটং ইউনিয়নের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের নিকট অবৈধভাবে এসব ইটভাটা গড়ে ওঠলেও তাদের বিরুদ্ধে নেই কোন আইনি ব্যবস্থা। ফলে তারা আরো দ্বিগুন উৎসাহিত হয়ে বেপরোয়া ভাবে বন ও পরিবেশের মারাতœক ক্ষতি সাধন করে এ অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এসব ইটভাটার কারনে প্রতিনিয়িত উজাড় হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। আর হুমকির মূখে পড়েছে পরিবেশের ভারসাম্য।

স্থানীয়রা জানান,বিগত ১০/১২বছর পূর্বে পেকুয়া উপজেলার টইটং ও বারবাকিয়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের নিকট ৩টি ইটভাটা গড়ে ওঠে। এরমধ্যে স্থানীয় ঠিকাদার শাহাব উদ্দিনের মালিকানাধীন এবিএম ব্রিকস, আহমদ নবীর মালিকানাধীন এপিএম ব্রিকস দু‘টির অবস্থান টইটং ইউনিয়নে সংরক্ষিত বনের এক কিলোমিটারের মধ্যেই। এছাড়া বারবাকিয়া ইউনিয়নের পাহাড়িয়াখালী এলাকায় জনৈক আবু তাহেরের মালিকানাধীন এবিএম ব্রিকস নামে অবৈধ ইট-ভাটাগুলো গড়ে ওঠলেও বিগত এক বৎসর পূর্বে স্থানীয় গুটিকয়েক বিএনপি-জামায়াত নেতা সিন্ডিকেট করে আরো ১টি ইটভাটা গড়ে তোলে। জানা গেছে, পুর্বে গড়ে ওঠা ৩টি ইটভাটায় সংশ্লিষ্ট পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র ছাড়ায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠেছে। নতুন গড়ে ওঠা ইটভাটা মালিকরা তথ্য গোপন করে সংশ্লিষ্ট বনবিট কর্মকর্তা ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে ঠিকই ইটভাটা করেছে। অভিযোগ ওঠেছে, ওই ইটভাটার মালিক তথ্য গোপণ করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে ইট উৎপাদনের শর্তারুপ করে সেটির অনুমোদন নিলেও বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে সরকরী ইট পুড়ানো আইন লংঘন করছেন। সম্প্রতি সময়ে অনুমোদন নেওয়া ওই ইট-ভাটার অবস্থানও সরকারী সংরক্ষিত বনাঞ্চলের এক কিলোমিটারের মধ্যেই। এছাড়া ইট উৎপাদনে পুরোটাই কয়লা জ্বালিয়ে ইট উৎপাদনের শর্তারোপ বেধে দেওয়া হলেও এনিয়ম মোটেও মানা হচ্ছেনা। তারাও অন্যগুলির মত কেবলমাত্র লাকড়ি জ্বালিয়ে ইট উৎপাদন করছে।

গতকাল দুপুরে সরেজমিন পেকুয়ার ইট-ভাটাগুলো পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখা যায়, ওই ইটভাটাগুলোতে ইট উৎপাদনের জন্য লাকড়ি পোড়ানো হচ্ছে। ভাটার চিমনি দিয়ে প্রতিনিয়ত বের হচ্ছে কালো ধোঁয়া। ইটভাটায় কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের কাছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানায়, লাকড়ি পোড়ালে চিমনি দিয়ে এভাবে কালো ধোঁয়া বের হয়। অন্যদিকে কয়লা পোড়ানো হলে বের হবে সাদা ধোঁয়া। দেখা গেছে এসব ইটভাটায় পোড়ানোর জন্য লাকড়ি মজুদ করা হয়েছে। কিছু খনিজ কয়লা স্তুপিকৃতবস্থায় রাখা হয়েছে। কিন্ত এগুলো জালানো হয়না। শুধু লোক দেখানোর জন্য রাখা হয়েছে। লাকড়ি দিয়ে ইট উৎপাদন করলে খরচ লাগে কম। তাছাড়া পাহাড়-বেষ্টিত ইটভাটায় অহরহ লাকড়ি মিলে। এক শ্রেণীর অসাধু কাঠচোর সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে গাছ, গাছের ডালপালা কেটে ভাটিতে বিক্রি করে। এসব কাঠচোর সিন্ডিকেটের সাথে রয়েছে ইটভাটার মালিকদের গভীর সম্পর্ক। এ সুবাধে কাঠচোর সিন্ডিকেট পাহাড় থেকে গাছ কেটে এনে পানির দামে বিক্রি করে তাদের কাছে। পাহাড় অঞ্চলে অধিকাংশ মানুষ লাকড়ির উপর জীবিকা নির্বাহ করে। তারা অনেকে কাধে বহন আবার কিছু ভ্যানগাড়ি, পিকআপ, জীপযোগে পরিবহন করে ইটভাটাসহ অন্যত্র পাচার করে থাকে। এদিকে এ কাজ নির্বিগ্নে চালিয়ে গেলেও এদের বিরুদ্ধে নেই কোন ব্যবস্থা। সংশ্লিষ্ট বনবিভাগ ও প্রশাসন নিরব থাকায় দিনদিন তাদের দৌরাতেœ্য বেড়েই চলেছে। মাঝে মধ্যে অবৈধ ইট-ভাটাগুলোতে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে লোক দেখানো জরিমানা আদায় করলেও বর্তমানে প্রশাসন রহস্যজনক ভাবে এতে নিরব রয়েছে।

এদিকে স্থানীয় পরিবেশ প্রেমীরা জানিয়েছেন, বনবিভাগের অসাধু কর্মকতারা ওই অবৈধ ইট-ভাটা গুলোর মালিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের মাসোয়ারা নিয়ে প্রতিনিয়ত বনের গাছ দিয়ে নির্বিচারে ইট-পুড়ানোর কাজ অব্যাহত রেখেছে। তারা এসব অবৈধ ইট-ভাটা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য সরাসরি বন ও পরিবেশ মন্ত্রীর হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বারবাকিয়া বনবিট কর্মকর্তা তহিদুল ইসলাম বলেন, খবর নিয়ে অবৈধ ইট-ভাটা গুলোর বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মারুফুর রশিদ খাঁনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান শিগগিরই অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।

 #############

পেকুয়ায় মৃদু ভূমিকম্পের আতংক

নিজস্ব প্রতিনিধি.পেকুয়া :

পেকুয়ায় মৃদু ভূমিকম্পে জনমনে আতংকের খবর পাওয়া গেছে। গতকাল ১৩ এপ্রিল বুধবার এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, এদিন রাত আনুমানিক পৌনে সাতটার দিকে মৃদূ ভূমিকম্প অনূভুত হয়। এসময় ভুমিকম্পের ধাক্কায় দালান, কোটা, বাড়িঘর, দোকানপাট ও সড়কজুড়ে কম্পন দেখা দেয়। তখন লোকজন তাদের অবস্থানস্থল ছেড়ে রাস্তাঘাট ও বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসে এবং প্রাণরক্ষায় হুড়োহুড়ি দৌঁড়ঝাফে ব্যস্ত হয়ে উঠে। আতংকিত লোকজন দোয়া দরুদ পাঠ শুরু করে দেয়। কয়েক সেকেন্ড পর জনজিবন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

পাঠকের মতামত: